সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

ভুল ডায়াগনসিসে শিক্ষার্থী মৃত্যুর অভিযোগ

অনলাইন ডেক্স
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২২
  • ৭০ সময় দর্শন

কুষ্টিয়ায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে ১৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার অ্যাপেন্ডিক্স হলেও রিপোর্ট আসে লিভার ইনফেকশনের। রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ায় পেট ফুলে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যায়। দ্রুত অপারেশন টেবিলে নেয়া হলেও গত শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আজমির নামের ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।

এ নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে চিকিৎসক ও সচেতন মহলে।

মৃত্যুবরণকারী ওই শিক্ষার্থী আজমির কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মাঝিলা গ্রামের আক্তার মন্ডলের ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আক্তার মন্ডল বলেন, গত ২৩ অক্টোবর পেটে ব্যথার কারণে ছেলে আজমিরের চিকিৎসা করাতে আসেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। চিকিৎসক রুমন রহমান প্রাথমিকভাবে দেখে তাকে আল্ট্রাসাউন্ড করার পরামর্শ দেন। তিনি হাসপাতালে টেস্ট করাতে না পেরে ঐ দিনই তার ছেলেকে নিয়ে কুষ্টিয়ার আমিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেষ্ট করান। সেখানে রিপোর্ট আসে লিভারে ইনফেকশন হয়েছে। চিকিৎসক ঐ রিপোর্ট অনুসারে ওষুধ লিখে দেন। ওষুধ খাওয়ার পর ব্যথা চলে গেলেও পেট ফুলতে থাকে। পরে পেটের উপরের দিকের ব্যথা নিচের দিকে করতে শুরু করে। আরো বেশি অসুস্থ্য হয়ে যায়।

তাই ২৬ অক্টোবর আবারও ছেলে আজমিরকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন আক্তার মন্ডল। ওষুধে পেটের ব্যথা না কমায় চিকিৎসকের সন্দেহ হয় টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে। তাই আবারও করাতে বলেন টেস্ট। আর এতেই বের হয়ে আসে ভুল রিপোর্টের তথ্য।

পরদিন ২৭ অক্টোবর অন্য একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করালে রিপোর্ট আসে বাস্ট এ্যাপেন্ডিক্স। তখন চিকিৎসক অধিকতর নিশ্চিত হতে আরো একটি ডায়াগনস্টিকে পাঠান টেস্ট করাতে। ওই দিনই সেখানকার রিপোর্টও একই রকম আসে বাস্ট এ্যাপেন্ডিক্স। এরপর জরুরি ভিত্তিতে অপারেশনের পরামর্শ দেন, ভর্তি রাখা হয় হাসপাতালে। ২৮ অক্টোবর অপারেশন হয় কিন্তু বাচাঁনো যায়নি আজমিরকে। ২৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

ভুল রিপোর্টের কারণে তার এ মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা পরিবারের সদস্যরা। মা শাহানারা খাতুন বলেন, ‘ডাক্তারের কোন দোষ নেই। আমিনের ভুল রিপোর্টের কারণেই আমার ছেলে মারা গেল। টেস্ট রিপোর্টের ব্যবসা করতে এতোবড় ভুল করলো যার জন্য আমার ছেলেকে হারাতে হলো। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কারসাজি বন্ধ করার দাবি জানান তিনি’।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার রুমন রহমান বলেন, ‘আমি প্রথম দিকে এই রোগীকে দেখেছিলাম। অনেক সময় রোগ হঠাৎ করে বেড়ে যায়, তখন ডায়াগনসিসে ধরা পড়ে। সব রোগীকে আমরা হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা করাতে বলি। কিন্তু ১২টার পর এখানে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে রোগীরা বাইরে থেকে টেস্ট করান’।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আশরাফুল আলম বলেন, দিনে চিকিৎসকদের দেখাতে হলে আড়াইটার মধ্যে রিপোর্ট দিতে হয়। এ কারণে ১২টার পর আর নতুন পরীক্ষা করা হয় না।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান বলেন, রোগীর ক্লিনিক্যাল ফিচার দেখে প্রথমে অনুমান করা হয়। পরে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরি টেস্ট দেওয়া হয়। সে অনুসারে দেওয়া হয় চিকিৎসা। তবে যদি রিপোর্ট ভুল হয়, চিকিৎসায় রোগীর সমস্যা হবেই।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারি রেজিস্টার ড. রাজিব মৈত্র বলেন, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ল্যাবরেটরি টেস্ট। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকার কারণে ঘটছে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা। একই সঙ্গে তাদের রোগ নির্ণয়ের মেশিনপত্র ও উপাদানগুলোও মানসম্পন্ন নয়। বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রদানকারি আমিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। পরে এই প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ কর্মকর্তা চঞ্চল হোসেন বলেন, আমাদের রিপোর্ট ভুল হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি সনোলজিস্ট ডাক্তার রবিউল ইসলাম বলতে পারবেন। তবে, তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে কথা হয় কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাক্তার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটি খুব গুরুতর অভিযোগ। কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ নিয়ে আসলে আমি আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব’।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পড়ুন এই বিভাগের আরও খবর

স্বত্ব © ২০২৩  sadhinbangla.tv 

Download App Sadhin Bangla TV News

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
raytahost-tmnews71